শিক্ষার্থীরা সবাই সেরা, সকল স্কুলই দেশসেরা
’21st century kids are being taught by 20th century adults using 19th century curriculum and techniques on an 18th century calendar.’~ Tom Hierck
এই যে আমরা সুন্দর ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখলে, তুলুতুলু গালে আলতো আদরে বলি, আহা এ যেন এক কিউটের ডিব্বা। অর্ধসত্য। বর্নবাদী। নিরপেক্ষ পূর্নসত্য হচ্ছে প্রতিটি শিশুই অনন্য, অসাধারন এবং আমাদের চেয়ে অগ্রগামী। স্রষ্টা প্রত্যেকের নিউরনে এক অসাধারন অটো-রান সফটওয়্যার দিয়ে দেন, যা স্বয়ংক্রিয় ভাবে ভবিষ্যতমুখী, সাবলীলভাবে স্মার্ট। সমস্যা হলো আমাদের পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ তাদের মাথায় মিথ ঢুকিয়ে দিয়ে কাউকে ফার্স্ট, কাউকে লাস্ট, কাউকে চালাক, কাউকে ভালো অথবা কাউকে বোকা বানায়। বৈষম্যমুলক এই শিক্ষাব্যবস্থাকে Ken Robinson বলেছেন Death Valley বা মৃত্যু উপত্যকা, Salman Khan তার The One World SchoolHouse বইয়ে বর্তমান স্কুলিংকে The Broken Model বলেছেন। চলমান শিক্ষাব্যবস্থায় ভুলের কোন স্থান নেই, যেকোন মূল্যেই প্রথম হতে হবে, হতে হবে সেরাদের সেরা, প্রথমেই পেতে হবে প্রথম শ্রেণীর চাকরী। ‘সেরা’ হওয়ার এই শিক্ষাব্যবস্থার কিছু বড় গলদ হচ্ছে : ক) ভুলের কারনেই পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব মেনে না নেয়া, খ) ভুলই স্বাভাবিক,যত ভুল তত শিক্ষন তত উন্নয়ন মেনে না নেয়া, গ) ছড়িয়ে দেয় ঘৃনা ও বৈষম্য (যেমন খারাপ ছাত্রের সাথে মিশিওনা) ঘ) উস্কে দেয় অযথা ঈর্ষা (যেমন গরীবের ছেলে এত ভালো স্কুলে চান্স পেল, আর তুমি কি করলা, যা চাও, তাই পাওতো তাই বুঝনা), ঙ) সেরা হওয়ার এই শিক্ষাব্যবস্থা দুর্নীতি ও চুরিকে উস্কে দেয় (যেহেতু সেরা হতে হবে, তাই প্রশ্ন ফাস করতে হবে, প্লেজেরিয়াজম করতে হবে)
হয়তো সেজন্যই, ভুলেভরা সেরা হওয়ার পশ্চাৎপট শিক্ষাব্যবস্থায় পৃথিবী পাল্টে দেয় ড্রপআউট বা ব্যাকবেঞ্চাররা, তারাই নিয়ে আসে নতুনত্ব, যুগপৎ সব আইডিয়া আগামীর জন্য, আর তথাকথিত সেরারা স্যালারিড মানুষ হয়ে সম্মানের সাথে সমসাময়িকে সমানতালে সব্যসাচী হয়ে চলে বটে, তবে হারিয়ে যায় মৃত্যুর সাথে সাথে। এসব নিয়ে দেশে বিদেশে থেমে নেই নিরন্তন গবেষনা, শিক্ষাব্যবস্থার চলতি হালচাল আর রকমফের নিয়ে কিছু উপায়ান্তর মন ছুঁয়েছে আমার:
১. স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশসমূহে কোন সেরা স্কুল নেই, মূলত সকল স্কুলই সেরা, নেই কোন সেরা শিক্ষার্থী কারন সকলেই অনন্য ও সেরা, প্রত্যন্ত প্রদেশের স্কুল ও শিক্ষার্থী থেকে রাজধানী কেন্দ্রিক স্কুল ও শিক্ষার্থীর কোন পার্থক্য নেই।
২. বাংলা বা ইংরেজি বলে কোন মিডিয়াম বা ভার্সন নেই, নেই কোন প্রাইভেট স্কুল, সকল স্কুলই পাবলিক, সবখানেই একটাই মিডিয়াম, একটাই ভার্সন, একই কোর্স, একই কারিকুলাম।
৩. একটি নির্দিষ্ট বয়স বা শ্রেণী পর্যন্ত নেই কোন পরীক্ষা, নেই প্রথম হওয়ার তাগাদা, উচ্চতর পর্যায়ে পরীক্ষার ফলাফল দিলেও তা ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয় হিসাবেই দেয়া হয়; মানুষ সামাজিক জীব, যুথবদ্ধ প্রানী, সেজন্য আছে সম্মিলিত প্রয়াস, আছে কমিউনিটি ইনগেজমেন্ট, আছে গ্রুপ ওয়ার্ক।
৪. এদের শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হচ্ছে চাকরী নয়, জীবনকে খোজা, শান্তির সন্ধান করা। জীবনের নিবিড় নিগূঢ় মানে বুঝা, প্রকৃতি-পৃথিবীতে শান্তির অন্বেষণ করা; চাকরীই জীবন~এমনকোন স্কুলিং হয়না এসব দেশে। জন লেলনকে স্কুলে একটা এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছিল, বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও, কেউ লিখেছে ডাক্তার, কেউ লিখেছে ইঞ্জিনিয়ার, আর জন লেলন লিখেছে আমি সুখী হতে চাই। তখন শিক্ষক তাকে বলেছিল, তুমিতো এসাইনমেন্ট বুঝনাই, প্রতিউত্তরে লেলন বলেছিল, স্যার, আপনি তো জীবন কি সেটাই বুঝেন নাই। (When I was 5 years old, my mother always told me that happiness was the key to life. When I went to school, they asked me what I wanted to be when I grew up. I wrote down ‘happy’. They told me I didn’t understand the assignment, and I told they didn’t understand life.)
Graham Brown-Martin এর Learning {Re}imagined বইয়ে বলেছেন উনবিংশ শতাব্দীর ফ্যাক্টরি মডেলের স্কুলকে যদি আমরা সৃজনশীল (Creative Schools) করতে না পারি, যদি জীবনময়ী ( Schools of Life) করতে না পারি, তবে আগামীতে শিক্ষার সাথে সভ্যতার সংঘাত অনিবার্য যেমনটি H.G.Wells বলেছেন ‘Civilization is a race between education and catastrophe.’
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আবহে সভ্যতার এই সংঘাত এড়াতে হলে স্কুলসমূহকে হতে হবে উদ্ভাবনী চিন্তার প্রজনন কেন্দ্র, এখনই। কারন YOU are the Future. The Future is NOW.
@মাহফুজ মাসুম