একহালি একটি গল্প ও শুন্যশিক্ষা
স্রষ্টা আমাকে দুমুঠো অন্ন ও দুটো মোটা কাপড়ের ব্যবস্থা করেছেন একটি কর্মের মাধ্যমে। সেই কর্মের মাধ্যমেই প্রতিনিয়ত সম্মানিত নাগরিকদের নানাবিধ সমস্যা সরাসরি শুনি। বিচিত্র সব বিষয়াদি, বিচিত্র সব সমস্যা।কিছু কিছু সমস্যা শুনে আমি নিজেই সমস্যাগ্রস্থ হয়ে যাই, ধাধায় পরে যাই, কখনো কখনো এমনও চিন্তা আসে আমি সত্যিই হোমো সেপিয়েন্সের অন্তর্ভুক্ত?
১. খুলনায় বিশাল জমিদার বাড়ী। শতাধিক বিঘা ভু-সম্পত্তি। চার ভাই তিন বোন, সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাদের সন্তানেরাও দেশে বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। এক ভাইয়ের ফোন আসলো, ওই ভাইয়ের বাসায় দুটি বিদেশী অবৈধ অস্ত্র বক্সখাটের নিজে আছে। গেলাম এবং কিছুই পেলাম না। যা জানতে পারলাম, বাপদাদার রেখে যাওয়া শতাধিক বিঘা সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। সবমিলিয়ে সাত ভাইবোন মিলে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে সিভিল ক্রিমিনাল প্রায় ১৪ টি মামলা করেছে। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্পর্শকাতর কিন্ত মিথ্যা তথ্য দিয়ে থানা,পুলিশ র্যাব,দুদুক, এনবিআর সবাইকে নিয়ে যায়। পারিবারিক বাপদাদার সম্পত্তি নিয়ে দুর্বিষহ দুষ্ঠুচক্রের এই দ্বন্দ্ব নিকট অতীতে সুরাহা হবে বলে আমার মনে হয়নি।
২. তানিয়া তন্বীর পূর্বে একটি বিয়ে হয়েছিল, ডিভোর্স হয়েছে, সে ঘরে একটি ছেলে যার বর্তমানে বয়স ২৫। অন্যদিকে তানিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করে স্থানীয় এক নামকরা সম্পাদককে, সেখানে তার ১১ বছরের আরেক সন্তান। তানিয়ারা দুইবোন, বড়বোন থাকে মার্কিন মুল্লুকে,ছোটবোন খুলনায়, উত্তরাধিকার সূত্রে বিশাল একটি পাচতলা বাড়ীর মালিক। পূর্বের ঘরের ২৫ বছর বয়সী সন্তানের খায়েস হয়েছে মায়ের নামের বাড়ীটি একাই ভোগ করবে। সেকারনে নানা উপায়ে তার মায়ের দ্বারা বর্তমান স্বামীকে ডিভোর্স নিশ্চিত করিয়ে নারী নির্যাতন মামলা দিয়েছে এবং ওই সম্পাদক স্বামীকে জেলে পাঠিয়েছে।সেবা যত্নের নামে ছেলে কার্যত মাকে বন্দী করে রেখেছে। বাসা লিখে না পাওয়া পর্যন্ত এই পারিবারিক ল’ স্যুটের সহসা সুরাহা হবেনা মর্মে বুজতে পারছি।
৩.শশুর মারা গেছেন কয়েকমাস আগে। রেখে গেছেন কোটি টাকার সম্পত্তি। তার বড় মেয়ের স্বামী দলিল দস্তাবেজ জাল জালিয়াতি করে অর্ধেকের বেশী সম্পত্তি নিজের নামে করিয়েছেন। শাশুড়ী মেয়ে ও ছেলে জামাইয়ের এই কান্ডে ভূমি অফিস, সাব রেজিস্ট্রি অফিস, পুলিশ, র্যাব, আদালত ঘুরছে প্রতিদিন। জামাইয়ের সহজ সরল স্বীকারোক্তি যদি ওনারা সংক্ষুব্ধ হোন, দয়া করে আদালতের দ্বারস্ত হতে বলেন।
৪. জমিজমা সংক্রান্তে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি নিজের সবকিছু ত্যাগ করে অন্য একজেলায় কোনরকমে এক স’মিলে কাজ করে দিনাতিপাত করতেন। কিন্তু একমাত্র ছেলের বউ তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে চায়। নিজের ছেলের সাথে ওই লোক কথা বলতো মাঝে মাঝে। ছেলের বউ ঠিকানা জেনে ছেলেকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে পুলিশকে খবর দিয়ে সারারাত অভিযান করে শশুড়কে ধরিয়ে দেন।
৫. পরিবারের সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি বড় জামাই। বড় ব্যবসা,বেশ সহায় সম্পত্তি তার। শহরের কেন্দ্রে শাশুড়ীর একটি সুরম্য বাড়ী আছে যার ভাগ দুইবোন পাবে। ছোট জামাইয়ের অনেক পূর্বের একটি মামলা ছিল, কেমনে কেমনে অতিগোপনে সেই মামলার ওয়ারেন্ট বাহির করে গোপনে একটি বাহিনীর লোকদিয়ে ধরিয়ে দিলেন তাকে। পরিবারের সবাই বড় জামাইকে দায়িত্ব দিলেন ছোট জামাইকে জেল থেকে বের করার, অত্যন্ত শ্রদ্ধা আর বিনয়ের সাথে বড় জামাই আশস্ত্ব করেন পরিবারকে কিন্ত গোপনে গোপনে পুলিশ ও কোর্টে তদবীর করছেন যাতে তিনি কোনভাবেই জেল থেকে বের হতে না পারেন।
পাদটীকা :
তারা বা তাদের পূর্বসুরীরা যদি এসব জানে বা কোনভাবেই বুঝতে পারে তবে হয়তো ভাববে ‘ If Money and Material things make you believe you are better than others, you are the poorest person on planet.
Eric Jorgenson এর The Almanack of Naval Ravikant এর একটি শিক্ষা হচ্ছে every desire is a chosen unhappiness… if we let these desires run circles around us, we’ll never have peace. গৌতম বুদ্ধ মনে করতেন Desire is suffering.সেজন্য সম্পদে-রাজপ্রাসাদে তিনি শান্তি পাননি, সকল সম্পদ রাজ প্রাসাদ ছেড়ে দিয়েই তিনি স্রষ্টাকে পেয়েছেন, পেয়েছেন নির্মোহ নির্ভানা, পরম প্রশান্তির শান্তি।
জীবনের কূটাভাস হচ্ছে, আমরা শুন্যশিক্ষা গ্রহন করি কারন ‘প্রাচুর্যের লালসা আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত আকণ্ঠ করে রাখবে।’
@মাহফুজ মাসুম