ব্যবসা করতে দোকান লাগে, ঘর লাগে, লাগে আধুনিক অবকাঠামো। লাগে জনবল, লাগে যানবাহন, লাগে পুজি। ব্যবসা বা উদ্দোক্তা এমনি এমনি হয়না, সবাই হতেও পারেনা। বাবার ব্যবসা ছাড়া নিজে কোন কিছু করা এতো সহজ নয়। আমাদের দেশের বড় বড় কোম্পানীগুলো আসলে তাদের বাবার কষ্টার্জিত কোম্পানীগুলোকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তেমন কোন নতুনত্ব ছাড়া অনেকটা কনজিউমার কোম্পানী হিসাবে।এমন গড়পরতা ভাবনা নিয়েই বড় হচ্ছে আমাদের তরুন-তরুনীরা। এসব কারনে আমাদের বুয়েট, কুয়েট, ঢাবি,রাবি সহ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উদ্দোক্তা না হয়ে, হতে চায় চাকরীজীবি। অনেকেই বলে থাকেন হার্ভার্ড, এমআইটি সহ বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাকরী খুঁজে না, তারা কিভাবে উদ্দোক্তা হওয়া যায়, সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকে সারাক্ষন।
আমাদের মধ্যে প্রাচীন মিথ ও মনলোকের উপনিবেশিকতার জন্য সীমাবদ্ধ স্বপ্ন বিরাজমান বলে অনেকেই মত দেন।পৃথিবী পরিবর্তনের বড় বড় আইডিয়া গুলো কেন জানি আসেনা, আসলেও কেন জানি কাজ করেনা। কোন পুজি, কোন জনবল, কোন অবকাঠামো ছাড়াই এই সময়ের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানীগুলোর জন্ম। উবারের নিজের একটি গাড়ি নেই, একজন ড্রাইভার নেই, অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ট্রান্সপোর্ট কোম্পানী। এয়ারবিএনবি’র একটিও আবাসিক হোটেল নেই অথচ ম্যারিয়ট, প্যানপাসিফিক সবকিছুকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে বড় হোটেল কোম্পানী, নিজের একটি দোকানঘর নেই, নিজে একটি পন্য তৈরী করেনা, অথচ পৃথিবীর সেরা পন্য সরবরাহকারী কোম্পানী আমাজন বা আলিবাবা। ফেসবুক, গুগুল, ইউটিউব সহ প্ল্যাটফর্ম ব্যবসার জন্য আসলে কিছুই দরকার নেই, দরকার শুধু আকাশভেদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা, গগনবিদারী স্বপ্ন।
শুধু এক একটি আইডিয়া নিয়েই এগিয়েছে এসব কোম্পানী। গ্যারেজে জন্ম হয়েছে অনেক কোম্পানীর।স্টিভ জবস ও স্টিভ অজনিয়াক মিলে আপেলের যাত্রা শুরু করেন ক্যালিফোর্নিয়ার গ্যারেজে, সেখানেই হাত দিয়ে ম্যানুয়ালি ৩০ টি কম্পিউটার তৈরী করেন। ল্যারী পেইজ ও সার্গেই ব্রিন তাদের এক বন্ধুর গ্যারেজ ভাড়া করে গুগুলের কার্যক্রম শুরু করেন। পল এলেন ও বিল গেটস ১৯৭৫ সালে তার বাবার গ্যারেজে মাইক্রোসফট শুরু করেন।
স্ট্যানফোর্ড গ্রাজুয়েট হাউলেট ও প্যাকার্ডের এইচপি শুরু হয় একটি ভাড়া গ্যারেজে। বেজোসও তার গ্যারেজে আমাজন শুরু করে। একবিংশ শতাব্দীর আইডিয়া নির্ভর টেকবেসড কোম্পানীগুলো গতানুগনিক ব্যবসার সংস্কৃতিকে শুধু বদলেই দেইনি, নাগরিক মননে তৈরী করেছে নতুন এক সংস্কৃতি। ডিসরাপ্টিভ টেকনোলোজির সাথে যেসব কোম্পানী তাল মিলাতে পারবেনা, তাদের যত পুজিই থাকুক, যত জনবলই থাকুক, যত নান্দনিক অবকাঠামোই থাকুক না কেন, চলে যেতে হবে কোমায়, যেমনটি গিয়েছে কোডাক,ব্লকবাস্টার,লেহম্যান ব্রাদার্স।
ব্যবসা করতে আসলে বাবার ব্যবসা লাগেনা, ব্যবসা করতে পুজি লাগেনা, ব্যবসা করতে অবকাঠামো লাগেনা, জনবল লাগেনা। লাগে শুধুই একটি আইডিয়া আর অপ্রতিরোধ্য আশা। দিগ্ববিজয়ী আইডিয়া আর দূর্বার আশায় মত্ত হয়ে আমাদের তরুনরা যদি একবার, শুধু একবার ভাবতে শিখে পৃথিবী পরিবর্তনের, তাহলে সেটা হবেই হবে।
আমাদের মননে মস্তিষ্কে, শয়নে স্বপনে সন্দেহাতীত ভাবে দ্বিধাহীন চিত্তে বিশ্বাস করতেই হবে: আমাদের অদম্য তরুনরা অচিরেই পৃথিবী পরিবর্তনকারী এক একটি আইডিয়া নিয়ে কাজ করবে।বি ব্রেইভ, জাস্ট বিলিভ ইট: ঢাবি, রাবি, এনএসইউ, বুয়েট, কুয়েট বা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছোট ভাই বা ছোট বোনই হবে নেক্সট বেস্ট সিইও অব দ্যা ওয়ার্ল্ড।