অস্থিরতা!অসহিষ্ণুতা! অমনোযোগীতা! ঝগড়া বিবাদ! যুদ্ধবিগ্রহ!সংযোহীনতা! ভারামী!ভন্ডমী! দ্বিচারিতা! টাকা নাই!পয়সা নাই! জ্বালানী নাই! তেল নাই! অস্ত্র নাই! বাড়ি নাই! গাড়ি নাই! অপর্যাপ্ততা! অপ্রতুলতা! বিশ্বটাই যেন কেমনভাবে সাজানো! সংশয়ময়, আগের যেন কোন সময়ের চেয়ে পৃথিবীর মানুষ এখন বেশী দোদুল্যময়।
অন্যদিকে আমি দেখি ভিন্নকিছু। স্থরে স্থরে সাজানো সীমাহীন স্বপ্নীল আকাশ, নৈশব্দের নিমগ্ন নীল সমুদ্র-প্রবাল- পদ্মরাগ, সবুজে বিস্তৃত মাঠের পর মাঠ সবুজ উদ্যান, কাদাপানিতে সিক্ত মোলায়েম ম্যানগ্রোভ, সুউচ্চ গাছের শ্বাস প্রশ্বাস, ভুগর্ভে পরিতৃপ্তির পানীয়, নি:সীমে চন্দ্র-সূর্যের উদয়াচল -অস্তাচল , দিবারাত্রির নির্বিবাদী গমনাগমন, সূর্যের আলোয় কর্মময় দিগন্ত, চন্দ্রের আগমনে চোখের বিশ্রাম, বিস্তারময় পর্বতমালা..কি নেই এখানে! কোন কিছুর তো অভাব দেখিনা। সংকল্পময়, আগের যেন কোন সময়ের চেয়ে পৃথিবীর মানুষ এখন বেশী সম্ভাবনাময়।
অন্ন বস্ত্র বাসস্থান স্বাস্থ্য চিকিৎসায় প্রতিটি মানুষ যখন নিশ্চিত, কিসের নেশায় এতো হাহাকার। প্রদত্ত সম্পদে টুইটুম্বর যখন আমার প্লানেট, তবুও কেন এতো অস্থিরতা, অসহনীয়তা, অসহযোগীতা।
এসবের উত্তর নিশ্চয় আছে। আসলে মানুষ জন্মগত ভাবেই অকৃতজ্ঞের অকৃতজ্ঞ। মহান সৃষ্টিকর্তা আল কুরানে আগেই বলেছেন ‘তোমাদের মধ্যে অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা’, ‘মুখ ফিরিয়ে নেয়’, ‘বিশ্বাস করেনা’, ‘চিন্তা করেনা’, ‘শোনেনা’। সমকালে মানুষের প্রাপ্তির খতিয়ান এতো দীর্ঘতর যে, মানুষ শুধুই পেতে চাই, একটা পেলে ভাবে ওটা নাই কেন, ওটা পেলে ভাবে, আহা, অন্যটা পেলে আরও ভাল হতো। শতাব্দী জুড়ে সভ্যতার এই হাহাকার থেকে অসীম সম্ভাবনার অপার পৃথিবীতে সুন্দর ভাবে শান্তিতে বেচে থাকার একটি অনন্য উপায় কৃতজ্ঞতা.
প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে, প্রতিবিন্দু আলোবাতাসে, ক্ষনে অনুক্ষনে-প্রতিক্ষনে এই যে বেচে থাকা,শুধু এটার জন্যই কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ থাকা দরকার সর্বক্ষন। ইসলামসহ সকল ধর্মে কৃতজ্ঞ থাকার নির্দেশনা আছে। Kᴀᴛɪᴇ Lᴇɴʜᴀʀᴛ এর Gʀᴀᴛɪᴛᴜᴅᴇ ɪs ᴛʜᴇ Oɴʟʏ Aᴛᴛɪᴛᴜᴅᴇ বইয়ে যা বলতে চেয়েছেন তা হলো দার্শনিক Mᴀʀᴄᴜs Tᴜʟʟɪᴜs Cɪᴄᴇʀᴏ এর বক্তব্য: Gʀᴀᴛɪᴛᴜᴅᴇ ɪs ɴᴏᴛ ᴏɴʟʏ ᴛʜᴇ ɢʀᴇᴀᴛᴇsᴛ ᴏғ ᴠɪʀᴛᴜᴇs ʙᴜᴛ ᴛʜᴇ ᴘᴀʀᴇɴᴛ ᴏғ ᴀʟʟ ᴏᴛʜᴇʀs.
আপনি যত কৃতজ্ঞ হবেন (Iɴғɪɴɪᴛᴇ Gʀᴀᴛɪᴛᴜᴅᴇ)ততই বেশী পাবেন, ততই সুখী হবেন, ততই শান্তিতে (Uɴʟɪᴍɪᴛᴇᴅ Hᴀᴘᴘɪɴᴇss)থাকবেন। নিত্যনৈমিত্তিক কাজে নিরন্তন স্রষ্টার অনুকম্পা অনুভব করতে পারবেন অলৌকিক ভাবে ঈশ্বরের পরম ইশারায়।
Lᴇᴡɪs Hᴏᴡᴇs তার Tʜᴇ Sᴄʜᴏᴏʟ ᴏғ Gʀᴇᴀᴛɴᴇss বইয়ে বলেছেন Iғ ʏᴏᴜ ᴄᴏɴᴄᴇɴᴛʀᴀᴛᴇ ᴏɴ ᴡʜᴀᴛ ʏᴏᴜ ʜᴀᴠᴇ, ʏᴏᴜ ᴡɪʟʟ ᴀʟᴡᴀʏs ʜᴀᴠᴇ Mᴏʀᴇ, ɪғ ʏᴏᴜ ᴄᴏɴᴄᴇɴᴛʀᴀᴛᴇ ᴏɴ ᴡʜᴀᴛ ʏᴏᴜ ᴅᴏɴᴛ ʜᴀᴠᴇ, ʏᴏᴜ’ʟʟ ɴᴇᴠᴇʀ ʜᴀᴠᴇ ᴇɴᴏᴜɢʜ. পরিমিত পরমাত্মায় পরিপূর্ন পরিতৃপ্তি আসে শুধুই এবং শুধুই কৃতজ্ঞতায়। এডাম স্মিথের Tʜᴇᴏʀʏ ᴏғ Mᴏʀᴀʟ Sᴇɴᴛɪᴍᴇɴᴛs এ লিখেছেন Tʜᴇ sᴇɴᴛɪᴍᴇɴᴛ ᴡʜɪᴄʜ ᴍᴏsᴛ ɪᴍᴍᴇᴅɪᴀᴛᴇʟʏ ᴘʀᴏᴍᴘᴛs ᴜs ᴛᴏ ʀᴇᴡᴀʀᴅs ɪs ɢʀᴀᴛɪᴛᴜᴅᴇ.
আমি যারপরনাই কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ আবর্তিত অতীতের জন্য, কৃতজ্ঞ বহমান বর্তমানের জন্য, কৃতজ্ঞ ভরপুর ভবিষ্যতের জন্য। কৃতজ্ঞ স্রষ্টার অসীম সম্ভাবনাময় জীবনের জন্য; বৈচিত্র্যময় ও প্রাচুর্যপূর্ন বিপুলা পৃথিবীর জন্য।
আলহামদুলিল্লাহ। Tʜᴀɴᴋ Yᴏᴜ.Mᴇʀᴄɪ. Aʀɪɢᴀᴛᴏ.সূর্যের ন্যায় নিশর্ত নির্মোহভাবে নিমগ্নচিত্তে যতদিন কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ থাকতে পারবো ততদিন নিউরনের হাইপোথ্যালামাস হবে প্রদীপ্ত; জীবন হবে এক অনন্য আলোকপ্রভা।
©মাহফুজ মাসুম